বিখ্যাত লেখকদের ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প
প্রিয় বন্ধুগণ, আজ তোমাদের জন্য Info Edu Story নিয়ে এসেছে একটি রহস্যময় আধ্যাত্মিক গল্প গল্পের নাম 'নীলপ্রান্ত দ্বীপের অভিশপ্ত জাহাজ' (Nilpranto Dwiper Ovishopto Jahaj)। গল্পের রচয়িতা সারমিন সরকার ও সেখ সামিম।
Most Suspense Ghost Story | Spiritual Bengali Story | Bengali Ghost Stories
আমাদের ওয়েবসাইট এ সংকলিত রয়েছে ভুতের গল্প , প্রেমের গল্প , অভিযানের গল্প , বিজ্ঞানবিষয়ক গল্প ,রহস্যময় গল্প ,অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প, হাসির গল্প , মজার গল্প , ব্যর্থ প্রেমের গল্প কাহিনী , উপন্যাস এবং ছোট গল্প,সফলতার শিক্ষনীয় গল্প,ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প,শিক্ষনীয় গল্প ও শিক্ষামূলক ঘটনা,শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প,হাসির শিক্ষনীয় গল্প,শিক্ষনীয় ছোট গল্প পিডিএফ,শিক্ষনীয় মোটিভেশনাল গল্প, হাদীসের শিক্ষনীয় গল্প ,রহস্যময় প্রেমের গল্প,রহস্যময় গল্প পিডিএফ,রহস্যময় গল্পের বই,রহস্যময় মজার গল্প,রহস্যময় ভূতের গল্প,বিশ্বের সেরা ভূতের গল্প,ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প,বিখ্যাত লেখকদের ভূতের গল্প,বাংলা ভুতের গল্প,রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প,পুলিশ ম্যাডাম রহস্য গল্প,সেরা রহস্য গল্প।
বাংলা সেরা রহস্য ভুতের গল্প - 'নীলপ্রান্ত দ্বীপের অভিশপ্ত জাহাজ'।রহস্যময় আধ্যাত্মিক গল্প। Bengali Ghost Story
নীলপ্রান্ত দ্বীপের অভিশপ্ত জাহাজ
গতবছর, গরমের ছুটিতে আমি আর রমেশ ঠিক করলাম শহরের কোলাহল ছেড়ে দূরে কোথাও ছুটি কাটাতে যাব। আমাদের গন্তব্য ছিল "নীলপ্রান্ত দ্বীপ," একটি নির্জন ও মনোরম দ্বীপ যা তার সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জায়গাটি পরিচিত ছিল তার শান্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। শহরের ঝঞ্ঝাটমুক্ত এমন একটি জায়গা আমাদের অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল।
আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভোরবেলা। জাহাজটি বেশ বড়সড় এবং সুন্দর ছিল, সম্পূর্ণ পর্যটকদের জন্য তৈরি। যাত্রীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না, তবে বিভিন্ন দেশ ও রাজ্যের মানুষ এতে উঠে বসেছিল। প্রতিটি মানুষই একে অপরের থেকে আলাদা, কিন্তু সবার মধ্যে ছিল একধরনের উত্তেজনা, যেন নীলপ্রান্ত দ্বীপে পৌঁছে জীবনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
আমরা জাহাজের উপরতলায় একটি কেবিন পেয়েছিলাম। সেটি ছিল সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে খোলা জানালার সঙ্গে সাজানো। সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা বেশ সময় কাটাচ্ছিলাম। আমার সঙ্গী রমেশ বেশ মজার মানুষ, আর তার সঙ্গ সবসময় ভালো লাগে। আমরা ভাবছিলাম, এই জাহাজে কোনো নতুন বন্ধু হবে কিনা।
দ্বিতীয় দিনে, জাহাজে আমরা এক অদ্ভুত পরিবারকে লক্ষ্য করলাম। পরিবারটি ছিল নেপালের। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে ছিল, যার নাম পারথি। পারথির বয়স ছিল আনুমানিক ২২ বছর। সে ছিল অপূর্ব সুন্দর। গায়ের রং ছিল দুধে-আলতা, যেন স্রষ্টা নিজের হাতে তাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার চোখ দুটি ছিল গভীর কালো পুকুরের মতো, যার দিকে তাকালে মনে হতো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। তার ঠোঁট ছিল গোলাপের পাপড়ির মতো, আর চুল ছিল ঘন কালো, রেশমের মতো কোমল।
প্রথম দিন তাকে দূর থেকে দেখেছি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে, খাওয়ার টেবিলে সে এসে আমাদের সঙ্গে বসলো। তার মিষ্টি হাসি আর মধুর কণ্ঠস্বর আমাদের মুগ্ধ করেছিল। পারথি খুব সহজে আমাদের সঙ্গে মিশে গেল। সে জানাল, তার বাবা-মা এবং ছোট ভাই এই যাত্রায় তার সঙ্গী।
আমরা গল্প করতে করতে জানতে পারলাম, এই পরিবার প্রায়ই এমন নির্জন জায়গায় ঘুরতে যায়। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে অবাক করেছিল—পরিবারটি কখনো অন্য কারো সঙ্গে মিশতে চাইত না। পারথি ছিল ব্যতিক্রম।
পারথি আমাদের কিছু অদ্ভুত গল্প শোনাল। তার একটি গল্প ছিল জাহাজের অভিশাপ নিয়ে। সে বলল, "সমুদ্রের মধ্যে একটি অভিশপ্ত জাহাজ আছে , কেউ যদি ভুল করে একবার ওই জাহাজ টিতে উঠে পরে তারা আর কোনোদিন বাড়ি ফিরে যায়না। তোমরা কি সেই গল্প শুনেছ?"
আমি আর রমেশ কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলাম। রমেশ ঠাট্টা করে বলল, "তুমি কি ভুতে বিশ্বাস করো নাকি ?,পারথি।
আমি তো গল্পটা শোনার জন্য অনেক কৌতূহল হয়ে উঠলাম কিন্তু পারথি যেই গল্প শোনাবে ঠিক তখন এ তার বাবা , মা তাকে তাদের কাছে ডেকে নিলো। তার বাবা , মা আমাদের দুজনের দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকালো। যেন মনে হলো আমরা দুজনে তাদেরকে খেয়ে ফেলবো। যাইহোক আমরা দুজনে তারপর আমাদের রুমে এলাম।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এলো। আকাশে চাঁদ উঠেছে, কিন্তু সেই আলো জাহাজের চারপাশে অদ্ভুত অন্ধকার তৈরি করছিল। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দও যেন থেমে গেছে।
রাত গভীর হতে থাকল। জাহাজে হালকা বাতাস বইতে লাগল। আমরা তখনও পর্যন্ত নিজেদের কেবিনে ছিলাম। রমেশ তার ক্যামেরায় দিনভর তোলা কিছু ছবি দেখাচ্ছিল। রমেশ আর আমি লক্ষ্য করলাম ছবি গুলো সব কালো হয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা আমি রমেশকে বললাম ক্যামেরা টা খারাপ হয়ে যায়নি তো ? রমেশ বললো না। সে নাকি ঘুরতে আসবে বলে গতকাল এ ক্যামেরা টি কিনেছিলো। আমি তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করার পর আমরা একটা ছবি খুঁজে পেলাম যেটা আমরা জাহাজে উঠার আগে দুজনে তুলেছিলাম। তারপর আমাদের জাহাজের পাশে আরেকটি জাহাজ দাঁড়িয়ে ছিল সেই জাহাজের ছবি উঠেছে কিন্তু আমাদের জাহাজের ছবি কালো হয়ে গেছে। কিন্তু , কি করে ? আমার শরীর টা কেমন ঝমঝম করে উঠলো। যেন আমার শরীরের সমস্ত রক্ত ঠান্ডা হয়ে পড়ছিলো। রমেশ আমায় দেখে বললো তোমার শরীর এতো ঠান্ডা কেন ?
আমি রমেশকে বললাম, "পারথি তখন আমাদেরকে যে গল্পের জাহাজের কথা বলছিলো আমরা ওই জাহাজে উঠে পড়েনি তো"?
রমেশ বললো, "তুই ভাই এতো ভীতু আমি জানতাম না। "
রমেশ ও জানতো কিছু একটা গন্ডগোল তো আছে। কিন্তু সে আমার কথা ভেবে কিছু বলতে পারলো না।
ঠিক সেই সময়, দরজায় টোকা পড়ল।
রমেশ : এখন আবার কে এলো ? সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো , হয়তো রাতের খাবারের জন্য ডাকছে
আমি : "ভাই, দরজা খোল না। আমার খুব অস্বস্তি লাগছে।"
রমেশ দরজা খুলতেই দেখে, পারথি দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে সেই অদ্ভুত এক রহস্যময় মিষ্টি হাসি, কিন্তু এই হাসি যেন আগের থেকে আরও বেশি ভয়ঙ্কর। তার চোখদুটি কেমন যেন খালি আর চোখের মনি গুলো আগের থেকে যেনো আরও কালো লাগছিল, যেন মনে হচ্ছিল কোনো গভীর অন্ধকারের দরজা।
রমেশ কাঁপা গলায় বলল, "তুমি এখানে? এত রাতে?"
পারথি মৃদু স্বরে বলল, "আমি তো তোমাদের নিয়ে যেতে এসেছি। আমাকে কি ভুলে গেলে?"
আমি পিছন থেকে গলা বাড়িয়ে বললাম, "পারথি, এত রাতে এখানে আসার কারণটা কী? আর তোমার পরিবার কোথায়?"
পারথি হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলল, "আমার পরিবার তো এখানে নেই। আমি একাই এসেছি। তোমাদের সঙ্গ পেতে আর তোমাদের আমার সঙ্গী বানিয়ে নিতে।"
তার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল, যা আমার রক্ত হিম করে দিচ্ছিল। রমেশ ধীরে ধীরে বলল, "আমরা একটু বিশ্রাম নিচ্ছি, তুমি কাল সকালে এসো আর এখন আমরা কথা যাবো না ।"
পারথি হঠাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে জোর করে ঢুকে পড়ল। সে বলল, "তোমরা কি ভীতু? আর জোরে জোরে হাসতে লাগলো দিয়ে বললো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, আমি মজা করছিলাম।"
আমি ততক্ষণে বুঝে গেছি, কিছু একটা খুব ভুল হচ্ছে। পারথি আমাদের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসছিল। তার শরীরের রং যেন ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিল। তার চেহারায় একধরনের বিকৃত ছাপ ফুটে উঠছিল চোখ গুলো যেনো ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসছিল তা দেখে রমেশ আর আমি দুজন এই ভয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
পারথি হঠাৎ বলল, "তোমরা জানো, এই জাহাজে যারা আসে, তাদের আর ফিরে যাওয়া হয় না। আমার মতো তারাও থেকে যায়।"
আমি চিৎকার করে উঠলাম, "তুমি কি বলতে চাইছ? আমাদের সঙ্গে কী হবে?"
পারথি মৃদুস্বরে বলল, "তোমরা এরই মধ্যে আমাদের অংশ হয়ে গেছ। শুধু সময়ের অপেক্ষা।" বলেই আবারও পার্থী বিকট হাসতে লাগলো আর আমাদের কান যেনো ফেটে যাচ্ছিল।
রমেশ আমার হাত ধরে চিৎকার করে বলল, "এটা কী বলছে? ভাই আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করা যাবে না চল পালাতে হবে!"
আমরা দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু দরজা এমনভাবে লক হয়ে গেল যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি সেটিকে আটকে রেখেছে।
পারথি তার হাত বাড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। সে ফিসফিস করে বলল, "তুমি তো আমাকে বলেছিলে, ভয় পাবে না। এখন কোথায় তোমার সাহস?"
আমার শরীর একদম জমে গিয়েছিল। রমেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "এটা কোনো মানুষ নয়। এটা কিছু অন্যরকম।"
ঠিক সেই মুহূর্তে, জাহাজের বাতিগুলো একে একে নিভে গেল। চারপাশে এক গভীর অন্ধকার নেমে এলো। কেবিনের জানালা দিয়ে দেখা গেল, সমুদ্রের জল কেমন যেন লালচে আকার ধারণ করেছে যেনো মনে হচ্ছে রক্তের সমুদ্রের ওপরে আছি আমরা।পারথি অন্ধকারের মধ্যেই আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছিল, যেন সেখানে একধরনের অভিশপ্ত আলোকরশ্মি ছিল।
রমেশ আর আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। আমরা জানালার দিকে দৌড়ালাম। জানালা ভাঙার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেটাও যেন পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে আমরা সেই মুহূর্তে পুরো দিশে হারা হয়ে পরেছিলাম।
পারথি চিৎকার করে বলল, "তোমরা পালাতে পারবে না। এই জাহাজ তোমাদের বন্দি করেছে। আমার মতো তোমরাও এখানে চিরদিন থাকতে বাধ্য হবে মরবে তোমরাও মরবে।"
আমাদের চিৎকারে কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। পুরো জাহাজ যেন এক মৃত নগরীতে পরিণত হয়েছে।
তখন হঠাৎ, কেবিনের মেঝে কাঁপতে শুরু করল। পারথি ধীরে ধীরে মেঝের মধ্যেই বিলীন হয়ে গেল, কিন্তু তার হাসি আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকল।
আমরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রমেশ বলল, "এটা জাহাজ নয়। এটা যেন এক অভিশপ্ত পৃথিবী। আমরা এখান থেকে কীভাবে বের হব?"
আমি বললাম, "আমাদের বেরোতে হবে। কিছু একটা করতে হবে। হয়তো জাহাজের নীচে কোনো গোপন পথ আছে।"
আমরা কেবিন থেকে বাইরে বের হওয়ার জন্য জানালা দিয়ে দেখলাম। জাহাজের ডেকে ছায়ামূর্তির মতো কিছু জিনিস নড়াচড়া করছিল। তারা মানুষ নয় অশরীরী আঁত্মা । তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল
আমরা দিশেহারা হয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে ডেকে পৌঁছালাম। চারপাশের অন্ধকারের মধ্যে সেই ছায়ামূর্তিগুলো যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। রমেশ ফিসফিস করে বলল, "তারা কি আমাদের দিকে আসছে?"
আমি বললাম, "চুপ কর! কোনো শব্দ করিস না। আমাদের আগে বুঝতে হবে, এই জাহাজে কী ঘটছে।"
আমরা আস্তে আস্তে পায়ের শব্দ না করে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা বাতাস আমাদের গায়ে ছুঁয়ে গেল। বাতাসে যেন একধরনের মৃত মানুষের গন্ধ ছিল যা আমাদের হার হিম করে দিচ্ছিল।
রমেশ বলল, "আমরা কি কোনো ভূতুড়ে জায়গায় এসে গেছি?"
আমি বললাম, "শান্ত থাক। কিছু একটা কারণ তো আছেই। আমাদের সেই কারণটা খুঁজে বের করতে হবে।"
আমরা জাহাজের ডেকে একটা পুরনো কাচের জানালা দেখতে পেলাম। জানালার ওপারে একটা ঘর দেখা যাচ্ছিল। সেই ঘর থেকে অদ্ভুত সাদা আলো বের হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কোনো শক্তিশালী কিছু ওখানে লুকিয়ে আছে।
আমি বললাম, "চল, দেখি। হয়তো ওখানেই এই রহস্যের উত্তর লুকিয়ে আছে।"
রমেশ বলল, "ওখানে যদি আরও ভয়ঙ্কর কিছু থাকে?"
আমি দৃঢ় কণ্ঠে বললাম, "তাহলেও আমাদের সেখানে যেতে হবে। এই জাহাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অন্য কোনো উপায় নেই ।"
আমরা জানালার কাঁচ ভাঙার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেটা এত শক্ত ছিল যে ভাঙা সম্ভব হচ্ছিল না। হঠাৎ, সেই ছায়ামূর্তিগুলো একে একে আমাদের চারপাশে জড়ো হতে শুরু করল ।
তারা কোনো শব্দ করছিল না, কিন্তু তাদের উপস্থিতি যেন আমাদের শ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছিল। আমি বললাম, "দৌড়া! নইলে এখানেই শেষ!"
কিন্তু সেই ছায়ামূর্তি গুলো আমাদের দৌড়াতেই দিচ্ছিল না তারা আমাদের একদম কাছে এসেপরে ছিল আর আর আমাদের গলা টিপে ধরে ছিল ।
অবশেষে যাই হোক করে তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আমরা দৌড়ে গিয়ে ডেকের আরেক কোণে একটা পুরনো লোহার দরজা দেখতে পেলাম। দরজাটা অর্ধেক খোলা ছিল। রমেশ বলল, "ওখানে ঢুকি। হয়তো এটা আমাদের বাঁচানোর রাস্তা।"
আমরা দরজার ভেতরে ঢুকে দেখলাম, সেটা এক ধরণের ভূগর্ভস্থ চেম্বার। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেলাম, এক বিশাল ঘর। ঘরটার মাঝখানে একটা পাথরের বেদি। আর সেই বেদির ওপর একটা পুরনো বই রাখা।
রমেশ বলল, "এটা তো কোনো জাদুকরের গ্রন্থের মতো দেখাচ্ছে।"
আমি বললাম, "হয়তো এটাই সেই চাবি, যার সাহায্যে এই অভিশপ্ত জাহাজ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।"
আমরা বইটা খুলতেই ঘরের চারপাশে অদ্ভুত শব্দ শোনা গেল। বইয়ের পাতা জ্বলজ্বল করতে লাগল। সেই পাতাগুলোর মধ্যে অদ্ভুত চিহ্ন আর লেখা ছিল, যা আমরা বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ, একটা গভীর, ভীতিকর কণ্ঠ শোনা গেল, "তোমরা এখানে কী খুঁজছো?"
আমরা পিছন ফিরে দেখলাম, পারথি আবার আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এবার তার চেহারায় আর কোনো মানুষের ছাপ নেই। তার চোখদুটি আগুনের মতো জ্বলছিল। তার শরীর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
পারথি বলল, "তোমরা আমাকে মুক্ত করতে এসেছ? না কি নিজেরাই এই জাহাজের বন্দি হতে চাও?"
রমেশ চিৎকার করে বলল, "তুমি কী চাও? আমাদের মুক্তি দাও!"
পারথি হেসে বলল, "এই জাহাজ তার নিজের শিকার বেছে নেয়। যারা এখানে আসে, তারা আর কখনো ফিরে যেতে পারে না। আমি এই জাহাজের অংশ। আর এখন তোমরাও হতে চলেছ।"
আমি বললাম, "এখানে কোনো উপায় নেই?"
পারথি বলল, "একটাই উপায় আছে। এই বইয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সেই মন্ত্র, যা এই জাহাজকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু সেই মন্ত্র জপ করলে, তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে।"
রমেশ আর আমি একে অপরের দিকে তাকালাম। আমরা দুজনেই জানতাম, কিছু একটা করার সময় এসে গেছে মন্ত্র পাঠ করলেও মরতে হবে আর না করলেও মরতে হবে ।
আমি বইটা হাতে তুলে নিলাম। সেখানে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা ছিল, "এই মন্ত্র পাঠ করলে জাহাজ ধ্বংস হবে, কিন্তু এর সঙ্গে এর ভেতরে থাকা আত্মারা মুক্তি পাবে।"
আমি মন্ত্রটা পড়তে শুরু করলাম। পারথি চিৎকার করে উঠল, "থামো! তুমি জানো না তুমি কী করছ!"
ঘরটা কাঁপতে শুরু করল। চারপাশের বাতি নিভে গেল যেনো মনে হচ্ছিল একটা ঝড় বইছে এই জাহাজটির মধ্যে , কিন্তু আমি কিছুর পরোয়া না করে শুধু মন্ত্র পাঠ করে গেলাম। আস্তে আস্তে ছায়ামূর্তিগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে যেতে লাগল। পারথি আর তার ভয়ঙ্কর রূপ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকল।
আমাদের চারপাশে ঝড়ের মতো বাতাস টা কম হতে লাগল। হঠাৎ, জাহাজটা ধীরে ধীরে ডুবে যেতে শুরু করল।
রমেশ বলল, "আমরা কী করব এখন?"
আমি বললাম, "লাফাও! আমাদের সমুদ্রের জলেতে ঝাঁপ দিতে হবে।"
আমরা শেষ মুহূর্তে জলে ঝাঁপ দিলাম। জাহাজটা সম্পূর্ণভাবে ডুবে গেল। আমি সাঁতার কেটে একটা দ্বীপে উঠেছিলাম আর তারপরে আমার জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল। সকালে যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমার চারপাশে অনেক লোকজন কিন্তু রমেশ কে দেখতে পাইনি। আমি তাদের গতরাতের সমস্ত ঘটনাটা বিস্তারিত বলি তারা আমায় বলে যে তুমি যে প্রাণে বেঁচে ফিরেছ এটা তোমার ভাগ্য। অনেক খোঁজা খুঁজির পরেরও কিন্তু সেই দিনের পর থেকে আমি রমেশের আর কোনো খোঁজ পাইনি।
আমাদের জীবনের সেই অভিজ্ঞতা ছিল চিরস্মরণীয়। আমরা জানতাম, সেই অভিশপ্ত জাহাজ ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু পারথির সেই মিষ্টি হাসি আর ভয়ঙ্কর চেহারা আমাদের মনে চিরদিনের জন্য থেকে গেল।
আপনি কি যাবেন নীলপ্রান্ত দ্বীপে?
এই গল্প আজও "নীলপ্রান্ত দ্বীপ"-এর প্রতিটি যাত্রীর মনে আতঙ্ক তৈরি করে। তবে কেউ কেউ বলে, সেই জাহাজে মাঝেমধ্যে একজন পুরুষকে দেখা যায়। তার নাম রমেশ। আর তার পাশে একটি ছায়া, যার নাম পারথি।